শুরু

আমরা গত ডিসেম্বর মাসে পুরুলিয়ার চারটি(কুঢা , অকরবাইদ , বুন্ডি , কেশরগড় ) শবর অধ্যুষিত গ্রামে ২০০ টি পরিবারকে কম্বল এবং গ্রামের ১৫০ জন কচিকাঁচাদের সোয়েটার পোঁছে দিতে যাই । শবর উপজাতি হল আমাদের পশ্চিমবঙ্গ তথা ভারতবর্ষের সবচেয়ে অত্যাচারিত উপজাতির একটি । ব্রিটিশ আমলে তাদের ” বর্ণ ক্রিমিনাল ” রূপে চিহ্নিত করা হয় । বিনা কারনে তাদের জেলে ঢুকিয়ে চলত অত্যাচার । যার ফলে সমস্ত দিক দিয়ে মানুষগুলি পিছিয়ে । মহাশ্বেতা দেবী প্রথম এই সকল মানুষদের স্বার্থে কাজ করা শুরু করেন । তার কাজের ফলস্বরুপ প্রভুত উন্নতি হয় এদের সমাজে । তবুও যে গ্রামগুলির উল্লেখ করলাম সেখানে কারোর রেশন কার্ড নেই , গ্রামে কোনো টিভি নেই , রেডিও নেই ,খবরের কাগজ পৌঁছায় না । অর্থাৎ পৃথিবীর বুকে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন একটি দ্বীপ । শহরের সাথে অনেকটা দুরত্ব ।
তাই যেহেতু একটি জাতির উন্নতির জন্যে শিক্ষা আবশ্যক । সেইখান থেকেই আমাদের স্কুল তৈরির পরিকল্পনা । আমাদের দেশে যে সংরক্ষন ব্যবস্থা আছে , তা এই মানুষগুলোর জন্যেই করা । গ্রামের সবাই সেই আওতায় পড়েন অথচ সেই সম্পর্কে গ্রামে বেশিরভাগের মানুষের ধারনা নেই । যদি ১০ জন ছাত্রও মাধ্যমিক পাশ করতে পারে তবে তাদের জন্যে কত উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ অপেক্ষা করছে সে জন্যে এবং এই দশটি ছেলে আরও দশটি ছেলেকে পড়াশুনা করার স্বপ্ন দেখাবে সেইজন্যেই আমাদের স্কুল তৈরির স্বপ্ন ।
আচ্ছা গ্রামে কি স্কুল নেই ? নিশ্চয়ই আছে , প্রাইমারি স্কুল । কিন্তু শহর থেকে অনেক দূরে হওয়ার কারণে শিক্ষকেরা মাঝেমধ্যেই অনুপস্থিত থাকেন আর স্কুলের কাছে বাড়ি হওয়ায় ছাত্ররাও স্কুল পালায় । তাই যেই জমিটি আমরা দেখেছি সেইটি শহরঘেঁষা( গ্রাম থেকে অনেক দুর ) , ছাত্ররা সেখানেই থাকবে , খাবে , পড়াশুনা করবে । তাই স্কুল পালানোর অভ্যেস থেকে রেহাই আর যারা পড়াবেন তারা ওই গ্রামেরই লোক ,গ্রামে অনেকে এমন আছেন যারা উচ্চমাধ্যমিক পাশ করেছেন , অনেকে গ্র্যাজুয়েট । কিন্তু শুধু জাতির উন্নতির জন্যে গ্রাম ছেড়ে যান নি । গ্রামেই বাচ্ছাদের বিনে পয়সায় পড়াচ্ছেন , বিভিন্ন হস্তশিল্প মেলায় গ্রামের মানুষগুলোর হাতের কাজ পোঁছে দিচ্ছেন , সমাজের বাকী সাথে কথা বলতে শেখাচ্ছেন । কেউ যদি হস্তশিল্প মেলার ” জঙ্গলমহল” স্টলে গিয়ে থাকো দেখবে কিছু মানুষ হাতের কাজ করে চলেছেন , এরা কারও সাথে কথা বলেন না । নির্মলদারা এই মানুষগুলোকে শহরে আনছেন । তাদের অন্নসংস্থানের ব্যবস্থা করছেন । তাই এই স্কুল শুধু বিদ্যার্জনের স্থান নয় , একটি সমগ্র জাতির মধ্যে অধিকারবোধ তৈরি করার লড়াই , তাদের এগিয়ে আনার লড়াই ।
এবার জানা যাক কদ্দুর আমরা এগিয়েছি । আজ পর্যন্ত যা যা কাজ করেছি ,তা আমাদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট মারফত হয়েছে । কিন্তু যেহেতু কাজটি অনেক বড় তাই একটি রেজিস্টার্ড সোসাইটি গঠনের মাধ্যমে এবং সোসাইটির নামে অ্যাকাউন্ট খোলার মাধ্যমে হবে । সেই প্রক্রিয়া ইতিমধ্যে শুরু হয়ে গিয়েছে । আমরা প্রথম পর্বের অ্যাপ্রুভাল পেয়ে গিয়েছি এবং ফাইনাল অ্যাপ্রুভালের জন্যে আমাদের আদর্শ এবং উদ্দেশ্যসমেত কাগজ (কমেন্টে তার ছবি দিচ্ছি ) জমা করেছি ।
এই অ্যাপ্রুভালটি পেয়ে গেলেই অর্থাৎ রেজিস্টার্ড হয়ে গেলেই একটি ফেসবুক গ্রুপ তৈরি করে আপনাদের সক্কলকে অ্যাড করে কাজ শুরু করবো এবং নিয়মিত আপডেট দিতে থাকব ।
সুন্দরবন থেকে শুরু করে ক্যানিং , হুগলী , বাঁকুড়া , পুরুলিয়া এবং অন্যান্য সমস্ত কাজে যেভাবে সবাই একসাথে আমরা পাশে থেকে কাজ করেছি । এবারও হবে । ফাটিয়ে হবে ।

Leave a Reply

*